১২ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্বজোড়া আইফোন প্রেমীদের জন্য এক বিস্ময়কর দিন। ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোর অ্যাপেল পার্কে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো অ্যাপেলের নতুন পণ্য আইফোন ১৫-এর। পূর্বসূরী আইফোন ১৪ বের হওয়ার ঠিক এক বছর ৫ দিনের মাথায় দারুণ সব ফিচার নিয়ে মোড়ক উন্মোচন হলো নতুন সংস্করণটির। প্রতিবার নিজের সঙ্গে নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এই প্রযুক্তি পণ্য আবারও জোয়ার আনতে চলেছে স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতায়। ২২ সেপ্টেম্বর নাগাদ বাজারে ছাড়া হবে আইফোন ১৫। কি কি থাকছে এই নতুন আইফোনে, ইতোমধ্যে মার্কেট কাঁপানো আইফোন ১৪ কে তা কতটুকুই বা ছাঁপিয়ে যেতে পারবে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
অ্যাপেল আইফোন ১৫ এর মূল বৈশিষ্ট
ডিসপ্লে
৬.১ ইঞ্চি সুপার রেটিনা এক্সডিআর (এক্সটেন্ডেড ডিটেকশন রেসপন্স) ও এলইডি(অর্গানিক লেড) ডিসপ্লের উপরের দিকে রয়েছে ডায়নামিক আইল্যান্ড। মডেলের লেআউট ডিজাইনে দৈর্ঘ্য আসে ১৪৭.৬ মিলিমিটার(মিলিমিটার), প্রস্থ ৭১.৬ মিলিমিটার এবং উচ্চতা ৭.৮ মিলিমিটার। আর পুরো ডিভাইসটার ওজন ১৭১ গ্রাম। ডিসপ্লে রেজুলিউশন ২৫৫৬ বাই ১১৭৯ পিক্সেল, যেখানে পিক্সেল ঘনত্ব প্রতি ইঞ্চিতে ৪৬০ পিক্সেল।
এইচডিআর (হাই ডাইনামিক রেঞ্জ) উজ্জ্বলতার সর্বোচ্চ মাত্রা ১৬০০ নিট, যা আউটডোরে ২০০০ নিট পর্যন্ত পৌঁছায়।
রঙ ও গঠন
কালো, নীল, সবুজ, হলুদ, ও গোলাপী- এই পাঁচটি ভিন্ন রঙ দেওয়া হয়েছে পেছনের গ্লাসে। পেছনের পাতলা কর্নিং গ্লাসে টেক্সচার্ড ম্যাটের কাজ করা। ফ্রেম অ্যারোস্পেস-গ্রেড অ্যালুমিনিয়ামের এবং মসৃণভাবে বাঁকানো প্রান্ত। পুরো মজবুত কভারটি সিরামিক শিল্ডের।
আরও পড়ুন: ডিএনসিসির অ্যাপে মিলবে দাফন ও পুরোনো কবরের তথ্য
প্রসেসর
ডায়নামিক আইল্যান্ডকে তৎপর করার জন্য আইফোন ১৫-তে রয়েছে এ১৬ বায়োনিক চিপ। সিপিইউকে সচল রাখার জন্য রয়েছে ৩.৪৬ গিগা হার্টজের দু’টি এবং ২.০২ গিগা হার্টজের চারটি; মোট ৬-কোর। মেমরি ব্যান্ডউইথের ৫০ শতাংশেরও বেশি জুড়ে রয়েছে ৫-কোর জিপিইউ(গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট)। ১৬-কোর নিউরাল ইঞ্জিন সফ্টওয়্যারগুলোকে সমুন্নত রাখে আইওএস(আইফোন অপারেটিং সিস্টেম) ১৭-এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।
ক্যামেরা
৪৮ মেগাপিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন প্রধান ক্যামেরায় থাকছে ২৬ মিলিমিটার লেন্স, কোয়াড-পিক্সেল সেন্সর এবং ১০০ শতাংশ ফোকাস পিক্সেল। সেকেন্ডারি ক্যামেরায় থাকছে ১২ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা ওয়াইড সেন্সর এবং ১৩ মিলিমিটার লেন্স।
এ১৬-এর কম্পিউটেশনাল ফটোগ্রাফির শক্তি ব্যবহার করে এমনিতেই ক্যামেরা ২৪ মেগাপিক্সেল সুপার-হাই-রেজুলিউশনে উঠতে পারে। ডুয়াল-ক্যামেরা সিস্টেমে ০.৫এক্স, ১এক্স ও ২এক্স; মোট তিনটি স্তরে রয়েছে অপটিক্যাল-কোয়ালিটির জুম করার সুবিধা।
সামনের দিকে আছে ১২ মেগাপিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেলফি সেন্সর, যাতে রয়েছে ২৩ মিলিমিটার লেন্স।
আরও পড়ুন: ইসরো চন্দ্রযান-৩: ভারতের চন্দ্র বিজয়ে নারী বিজ্ঞানীদের সাফল্য
চার্জিং ও ডাটা কানেকশন হার্ডওয়্যার
চার্জিং ও ডাটা স্থানান্তরের হার্ডওয়্যার হিসেবে রয়েছে ইউএসবি‑সি, যা যে কোনো আইফোন ডিভাইসের সঙ্গে সংযোগের জন্য উপযুক্ত।
এছাড়াও রয়েছে ম্যাগসেফ এবং কিউআই-২ চার্জার সমর্থিত ওয়্যারলেস চার্জিং-এর সুবিধা। ব্যাটারি মাত্র ৩০ মিনিটে ৫০ শতাংশ চার্জ নিতে পারে। এমনকি, ম্যাগসেফের জন্য ১৫ ওয়াট এবং কিউআই-এর জন্য ৭.৫ ওয়াটে চার্জিং-এর সময়েও গতি একই থাকে।
এই আইফোনের দ্বিতীয়-প্রজন্মের আল্ট্রা ওয়াইডব্যান্ড চিপ তিনগুণ রেঞ্জের ভেতর দুটি আইফোন ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ করতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপে এইচডি ছবি যেভাবে পাঠাবেন
মেমোরি ও সিম কার্ড
১২৮ জিবি (গিগাবাইট), ২৫৬ জিবি, এবং ৫১২ জিবির প্রতিটি ভ্যারিয়েন্টের স্টোরেজের সঙ্গে থাকছে ৬ জিবি র্যাম।
ন্যানোসিমের সঙ্গে আইফোন ১৫-এর রয়েছে ২৯৫টিরও বেশি ক্যারিয়ার সমর্থিত ই-সিম সুবিধা।
আইফোন ১৫ বনাম আইফোন ১৪
অধিক মজবুত ও হাল্কা গঠন
পূর্বের স্টেইনলেস স্টিলের জায়গা দখল করেছে টাইটেনিয়াম ফ্রেম, যা নতুন ফোনে দিয়েছে মজবুত ও হাল্কা ওজন।
ডাইনামিক আইল্যান্ড
পুরানো সংস্করণগুলোর মত স্ক্রিনের উপরের দিকে নচের বদলে স্থান পাচ্ছে ডাইনামিক আইল্যান্ড। উদ্ভাবনী এই প্রযুক্তিতে ব্যবহারকারিরা গুরুত্বপূর্ণ অ্যালার্ট সহ বিভিন্ন লাইভ ক্রিয়াকলাপগুলোর রিয়েল টাইম অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন: অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তির ‘ভিশন প্রো’ হেডসেট নিয়ে এলো অ্যাপল
আউটডোরে উজ্জ্বল ডিসপ্লে
সুপার রেটিনা এক্সডিআর ও এলইডি ডিসপ্লের এইচডিআর উজ্জ্বলতা রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে ২০০০ নিট পর্যন্ত পৌঁছে, যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ উজ্জ্বল।
ব্যাটারিকে দীর্ঘায়ু করা প্রসেসর
এ১৬ বায়োনিক চিপের ৬টি কোরের ৩.৪৬ গিগা হার্টজের কোর দুটি সক্রিয় থাকার জন্য ২০ শতাংশ কম শক্তি নেয়। ফলে আগের তুলনায় এটি অনেক কম ব্যাটারি খরচ করে দ্রুত কাজ করতে পারে।
ডুয়েল ক্যামেরায় নতুন সংযোজন
তিনটি স্তরে অপটিক্যাল-কোয়ালিটির জুম করার ক্ষমতা আইফোন ডুয়েল-ক্যামেরা সিস্টেমে এই প্রথমবারের মত সংযোগ করা হয়েছে।
এছাড়া আইফোন ১৫-তে পেছনের প্রধান ক্যামেরা করা হয়েছে ৪৮ মেগাপিক্সেল, আর সেকেন্ডারি ক্যামেরা আগের মত ১২ মেগাপিক্সেলতেই থাকছে। সামনের ক্যামেরা রেজুলিউশন ১২ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৮ মেগাপিক্সেল।
চার্জিং ও ডাটা কানেক্টর সুইচ
পূর্বের লাইটনিং পোর্টে সার্বিক পরিবর্তন এনে এবারের অ্যাপেল পণ্যে থাকছে ইউএসবি ২.০ সম্পন্ন ইউএসবি-সি চার্জিং সুইচ।